টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রামু, কক্সবাজার এর ইতিহাস
বস্ত্র শিল্পের স্বনির্ভরতা অর্জন এবং বিদেশী প্রযুক্তির নির্ভরতা কমিয়ে এখাতে দেশীয় প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল তৈরীর জন্য ২০০৬ সালে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মাধ্যমিক হতে স্নাতক পর্যন্ত সকল পর্যায়ে বস্ত্র প্রযুক্তি ও বস্ত্র বিজ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার নির্দেশনা দেন।
গার্মেন্টস খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের নিমিত্তে বস্ত্র অধিদপ্তর দেশের দশটি জেলায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও ২০০৮ সাল হতে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণরূপে শুরু হয়।
“১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় ০.৯২ একর জায়গার উপর সৃজনশীল স্থাপত্য নকশায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট-এর চার তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট দ্বিতল একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে ড্রেস মেকিং ট্রেডে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্য দিয়ে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রামু, কক্সবাজার-এর শিক্ষা কার্যক্রম ২০০৬ সালে ভাড়াবাড়ীতে শুরু হয়। অত্র অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক টেক্সটাইল শিক্ষা এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ২০০৮ সালে ড্রেস মেকিং ট্রেডের সাথে ডাইং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং ট্রেড চালু করা হয় এবং মোট ৬০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১১ সালে পুনরায় উইভিং ট্রেড চালু করে তিনটি ট্রেডে সর্বমোট ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রকল্প সমাপ্তির শেষ বছর ২০১৪ সালে চতুর্থ ট্রেড হিসাবে অত্র প্রতিষ্ঠানে নিটিং ট্রেড সংযোজন করা হয় এবং ১০৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
রাষ্ট্রের বিশাল ও সম্ভবনাময় বস্ত্রখাতকে নিরাপদ ও প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য বস্ত্র খাতের ফ্লোর লেভেলে দক্ষ জনবল সরবরাহের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রামু, কক্সবাজার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মোট চারটি (এ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং বেসিকস্; ডাইং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং; উইভিং এবং নিটিং) ট্রেডে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানে দুইটি শিফটে চারটি ট্রেডে মোট আসন সংখ্যা ২৪০ জন।
বাংলাদেশ বর্তমানে অনুকুল জনমিতিক সুবিধাভোগ করছে (demographic window of opportunity) যা আগামী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রতিবছর ২.২ মিলিয়ন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়া যুবশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব না হলে এ জনমিতিক সুবিধাকে জনমিতিক লভ্যাংশে (demographic dividend) রূপান্তর করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের আরো একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো-বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাতের উপস্থিতি। মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৮৫.১% অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এই শ্রমজীবী মানুষদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তাই বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়ন করে তাদেরকে শ্রমবাজারের উপযোগী করে গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, রামু, কক্সবাজার National Technical & Vocational Qualification Framework (NTVQF) এর আওতায় টেক্সটাইল সেক্টর সংশ্লিষ্ট অকুপেশনসমূহে যুবসমাজকে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য কাজ শুরু করেছে।
সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক টেক্সটাইল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ তৈরীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে অত্র ইনস্টিটিউট দৃঢ় প্রত্যয়ী।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস